কচুরিপানা, যা সাধারণত অপ্রয়োজনীয় বলে গণ্য করা হয়, তা বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে ব্যবহার করা সম্ভব বলে মনে করে বঙ্গ ক্রাফট এন্ড কেয়ার টিম। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি ও তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যেটা টেকসই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করে পরিবেশগত ক্ষতি হ্রাস করে এবং পরিবেশবান্ধব সমাধানকে উৎসাহিত করে থাকে।

এই প্রজেক্টের আওতায় দক্ষিন অঞ্চলের কএকটি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে একই সাথে একাধিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব। এখানে কচুরিপানা দিয়ে বঙ্গ ক্রাফট এন্ড কেয়ার টিম যে সকল টেকসই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে করছে/করবে তার আইডিয়া দেয়া হলো:-
১. জৈব সার উৎপাদন
কচুরিপানাকে প্রক্রিয়াজাত করে জৈব সার (কম্পোস্ট) তৈরি করা যায়। এটি কৃষকদের কাছে বিক্রি করা সম্ভব। পরিবেশবান্ধব কৃষির জন্য এই সার অত্যন্ত কার্যকরী। স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে সমবায় তৈরি করে এই উদ্যোগ শুরু করা যেতে পারে।
২. বায়োগ্যাস উৎপাদন
কচুরিপানাকে বায়োগ্যাসের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে গ্রামীণ এলাকায় সাশ্রয়ী জ্বালানির ব্যবস্থা করা সম্ভব। উৎপন্ন বায়োগ্যাস বিক্রি করা যাবে এবং অবশিষ্ট বর্জ্যকে সারে রূপান্তর করা যাবে।
৩. হস্তশিল্প এবং ক্রাফট আইটেম
কচুরিপানার শুকনো অংশ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ঝুড়ি, বা হস্তশিল্পের পণ্য তৈরি করা যায়। এই পণ্য স্থানীয় বাজার ছাড়াও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করা সম্ভব।
৪. পশুখাদ্য উৎপাদন
কচুরিপানা শুকিয়ে বা প্রক্রিয়াজাত করে গরু-ছাগলের মতো পশুর খাবার প্রস্তুত করা যায়। এটি স্থানীয় খামারিদের কাছে বিক্রি করার পাশাপাশি পশুপালন সমবায়গুলোর সঙ্গেও ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি করা যায়।
৫. কাগজ এবং বোর্ড উৎপাদন
কচুরিপানার আঁশ থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাগজ বা বোর্ড তৈরি করা যায়। এগুলো গিফট কার্ড, ফাইল কভার, বা ইকো-ফ্রেন্ডলি প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত হতে পারে।
৬. জলাশয় পরিষ্কার এবং সংরক্ষণ প্রকল্প
কচুরিপানা অপসারণ এবং এগুলোর পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে স্থানীয় জলাশয় পরিষ্কার রাখা এবং সংরক্ষণ প্রকল্প গড়ে তোলা সম্ভব। এমন উদ্যোগ জলাশয়ের মাছ চাষ বা পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্পেরও ভিত্তি তৈরি করতে পারে।
৭. জ্বালানি ব্রিকেট উৎপাদন
কচুরিপানা দিয়ে বায়োফুয়েল ব্রিকেট তৈরি করা সম্ভব, যা রান্নার জন্য কাঠ বা কয়লার বিকল্প হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। গ্রামীণ এলাকায় এর চাহিদা ভালো হতে পারে।
৮. মাছের খাবার প্রকল্প
কচুরিপানা প্রক্রিয়াজাত করে মাছের খাবার তৈরি করা যায়। এটি মাছ চাষের খরচ কমাতে সহায়তা করবে।
সারকথা
প্রত্যেকটি উদ্যোগের মধ্যে মূল বিষয় হলো স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এমন উদ্যোগ কেবল আয়-রোজগারের উৎসই নয়, এটি পরিবেশ সুরক্ষা এবং স্থানীয় সমস্যা সমাধানের পথও খুলে দেবে বলে মনে করে বঙ্গ ক্রাফট এন্ড কেয়ার টিম।